আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দেশে ফিরতে চান ভারতীয় পানিসীমায় উদ্ধার হওয়া ১১৪ জন বাংলাদেশি জেলে। ভারতে তাদের থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার সু-ব্যবস্থা সত্ত্বেও পরিবার-পরিজনের জন্য ও সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার ভয়াবহ মুহূর্তের কথা স্মরণ করে তাদের কান্না থামছে না।
গত শুক্রবার বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় গভীর সমুদ্রে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় ভারত ও বাংলাদেশের একাধিক জেলে ট্রলার। দীর্ঘ সময় পানিতে ভাসতে ভাসতে সাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারতীয় পানি সীমায় প্রবেশ করেন এই ১১৪ বাংলাদেশি জেলে। ওই সময় মৃত্যুমুখ থেকে তাদের উদ্ধার করেন ভারতীয় জেলে, নৌসেনা, ভারতীয় কোস্টগার্ড এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশি জেলেরা জানান, তারা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও অধিকাংশ জেলের মধ্যেই গভীর সমুদ্রে ভেসে থাকার আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ডুবে যাওয়া বাংলাদেশি ট্রলারের জেলে মো. মফিজ বলেন, প্রায় ৩৬ ঘণ্টা গভীর সমুদ্রে ভেসে থাকার পর ভারতীয় এক ট্রলার তাদের উদ্ধার করে। তাদের দলের ২০ জন সদস্যের মধ্যে ২ জন এখনও চিকিৎসাধীন। যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে পরিবার পরিজনদের মধ্যে ফিরতে চান তারা। এক্ষেত্রে দুই দেশের প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রার্থনা করেন তারা।
আরেক মৎস্যজীবী ইয়াকুব আলী বলেন, আমাদের কাছে আগাম সতর্কবার্তা ছিল না, তাই বিপদে পড়েছি। উদ্ধার হওয়ার পরে এখনও সব মৎসজীবীরা তাদের মহাজন বা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তায় রয়েছে। যারা যোগাযোগ করতে পেরেছে, তাদের পরিবারের কান্নাও এখনও থামছে না।
ভারতীয় ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য বাবলু পাল বলেন, ‘উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশি মৎস্যজীবীরা কান্নাকাটি করছেন। আমরা ইতোমধ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অ্যাসোসিয়েশনের তরফে আবেদন জানিয়েছি। আমাদের এখানে তাদের খাদ্য-বস্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে, আপাতত তারা ভালো আছেন। তবে তাদের একমাত্র ইচ্ছা- তারা দ্রুত নিজের বাড়িতে ফিরতে চান।’
এদিকে ভারতের পক্ষ থেকে প্রশাসনিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃত সীমান্ত অতিক্রম হওয়ায় বাংলাদেশি জেলেদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। সে ক্ষেত্রে দুই দেশের সরকারের আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশি এসব জেলেদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিশারমেন অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক বিজন মাইতি জানান, উদ্ধারের পর প্রত্যেক বাংলাদেশি জেলেকে প্রশাসনিক তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত অভিযোগ নেই। তবে তাদের দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক আইন সংক্রান্ত কিছু পদ্ধতিগত প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভারত এবং বাংলাদেশ সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ এর মাধ্যমে তাদের দ্রুত দেশে ফেরানোর দাবি জানান তিনি।